সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা, এই পার্বত্য অঞ্চল। এখানে রয়েছে বনজী, ঔষধী ও প্রাকৃতিক কুল ঘেষে বেড়ে উঠা বিভিন্ন জাতের গাছ গাছালী। রয়েছে অনেক বড় বড় উচু-নিচু পাহাড়। মানিকছড়ি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ঐতিহ্যমন্ডিত ও গৌরবময় অবস্থান রয়েছে এই পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার। সুস্থ জাতি গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা অপরিসীম ও ব্যাপক। খেলাধুলার মাধ্যমে নিমর্ল আনন্দ পাওয়া যায় এবং নিরোগ শরীর গঠন করা যায়। মানব সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে ক্রীড়াঙ্গনের প্রবাহমানতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়াঙ্গন শুধুমাত্র গণমানুষের চিত্তবিনোদন ও আনন্দের ভিত্তি ভূমি নয়। ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়াঙ্গন মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা ও অগ্রগতির বিস্তীর্ণ চলার পথে এক চিহ্নিত মাইল ফলক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মানিকছড়ি উপজেলার প্রায় ৭ সম্প্রদায় মানুষের বসবাস। যার যার সম্প্রদায়ের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও ঐতিহ্য এবং খেলাধুলা ও বিনোদন। বিশেষ খেলার মধ্যে রয়েছে : ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি ও ব্যাটমিন্টন। তাছাড়াও এই অঞ্চলের মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই (১লা বৈশাখ) এর সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে,
১। পানি খেলা,
সাংগ্রাই
বৈসাবি উৎসবের 'সা' এসেছে পাহাড়ের অন্যতম মারমাদের 'সাংগ্রাই' উৎসব থেকে। মারমারা সাধারণত চন্দ্রমাস অনুসারে তাদের এই অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসবটি পালন করে থাকে। বছরের শেষ দুই দিন এবং নববর্ষের প্রথম দিন_এ তিন দিন ধরে চলে উৎসব। সাংগ্রাই উৎসব উদযাপনের সময় মারমা যুবক-যুবতীরা পিঠা বানানোর জন্য চালের গুঁড়া তৈরি করে। ঘিলার বিচি দিয়ে 'ঘিলা খেলা' এই উৎসবে মারমাদের প্রিয় একটি খেলা। এ সময় বৌদ্ধমন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় বাণী শোনে তারা। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সাংগ্রাই উৎসব পালন করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সাংগ্রাই শব্দটি এসেছেও সংক্রান্তি থেকেই। সাংগ্রাইয়ের তো বটেই, বৈসাবি উৎসবেরও অন্যতম আকর্ষণ মারমা তরুণ-তরুণীদের পানি খেলা। এই খেলার সময় যুবক-যুবতীরা একে অপরের দিকে পানি ছুড়ে মারে। স্নিগ্ধতায়, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় ভিজিয়ে দেয় পরস্পরকে। মারমা সংস্কৃতি সংসদ প্রতি বছর মারমা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই পানি উৎসব উদযাপন করে থাকে।
২। 'দ' (ঘিলা) খেলা,
প্রাচীনকাল থেকে পাহাড়ী অঞ্চলের আদি খেলা হল এই ঘিলা খেলা।ঘিলার বিচি দিয়ে 'ঘিলা খেলা' এই উৎসবে মারমাদের প্রিয় একটি খেলা। এটি বৈশাবি (১লা বৈশাখ) এর এক মাস আগমূহুর্ত থেকে বিভিন্ন পাড়ায় যুবক-যুবতি ছেলে-মেয়েদের আকর্ষনীয় একটি ঐতিহ্যগত খেলা।
ঘিলা পার্বত্য অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠিদের পবিত্র ফল। এটি জঙ্গলি লতায় জন্মানো এক প্রকার বীজ বাগোটা। ঘিলা নৃ-গোষ্ঠিদের সম্প্রদায়ের নানা কাজে ব্যবহৃত। তঞ্চঙ্গ্যাসম্প্রদায়ের বিশ্বাস, ঘিলার লতায় ফুল থেকে বীজ (গোটা) জন্মালেও এর ফুলপবিত্র দেবংশি (স্বর্গীয়) বস্তু হওয়ায় সাধারণ মানুষ ঘিলা ফুলের দেখা পাননা। শুধুমাত্র যারা মহামানব হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছেন তারাই এ ফুলের দেখা পান।ফুলের পরিবর্তে ঘিলা পবিত্র হিসেবে সংগ্রহ রাখেন তঞ্চঙ্গ্যারা। নৃ-গোষ্ঠিরা বিশ্বার করেন ঘিলা বাড়িতে রাখলে বজ্রপাত, বিপদ ও অপদেবতা বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না।
৩। বাশেঁ উঠা, ৪। বলি খেলা। তাছাড়াও বিনোদন হিসাবে পাংখোং অর্থাৎ ইতিহাসের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামজিক নাটক।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস